মারা যাওয়া শামীমা আক্তা
দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের শামীমা আক্তারের শরীরে। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীমার মৃত্যু হয়। সারাহর কিডনি প্রতিস্থাপন করা অপর নারী হাসিনা আক্তার মারা যান গত বছরের অক্টোবরে।
সবশেষ নিহত শামীমার ভাই শাহাজাদা হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের পর থেকে আমার বোনের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি বিকল হওয়ার পর তার শরীরে নতুন নতুন রোগের উপসর্গ দেখা দেয় যা আগে ছিল না। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর হাসপাতাল থেকে আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। অনেক সময় এমন হয়েছে যে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমাদের কে চেনেন না এমন ভাব দেখিয়েছেন। একমাত্র দুলাল স্যার আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আমার বোন মারা যাওয়ার আগে ধানমন্ডির একটা বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের জন্য নিয়ে যেতে হয়। বিএসএমএমইউয়ে এই ডায়ালাইসিস সেবা না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সেই হাসপাতালে নেওয়া হয়। এতে আমাদের আরও ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর তাকে নিয়ে আসি বিএসএমএমইউ, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আমার বোন মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের আইসিইউতে লাশ আটকে রাখা হয়, পরবর্তীতে অনেক কাকুতি মিনতির পর বন্ড স্বাক্ষর নিয়ে তার লাশ ছেড়ে দেওয়া হয়। শাহাজাদা হোসেন বলেন, সবশেষ হাসপাতালে ভর্তি করার পর বাইরে থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশী ওষুধ কিনতে হয়। আইসিইউর বাইরে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এই ওষুধ কিনি। আমার বোনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। তার লাশ নিয়ে আসার সময় ওষুধের টাকা বাকি থেকে গেছে। এখন এই টাকা কীভাবে দেব সেই দুশ্চিন্তায় আছি। বিক্রয় প্রতিনিধিরা বারবার টাকার জন্য কল দিচ্ছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের আর্থিক সামর্থ্য নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে শাহজাদা বলেন, এ ধরনের কিডনি আমার বোন ও অন্য আরেকজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। একটা রোগী আগেই মারা যাওয়ার পরও আমার বোনের প্রতি ডাক্তাররা উদাসীন ছিলেন। তারা কিডনি ট্রান্সফার করেই নিজেদের সব দায় শেষ করেছেন। তারা যদি নিয়মিত আমার বোনের তদারকি করতেন তাহলে হয়তোবা সে মারা যেত না।
এ বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। শামীমার কিডনি প্রতিস্থাপনে শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। তিনি বলেন, তার সি ভাইরাস ও বিরল নিউমোনিয়া ধরা পড়েছিল। সে অনুযায়ী ডায়ালাইসিসও শুরু করেছিলাম আমরা। কিন্তু উন্নতি হয়নি। বাইরের হাসপাতালেও একদিন নেওয়া হয়েছিল, অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় আবারও আমাদের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। এই চিকিৎসক আরও বলেন, হেপাটাইটিস সি পজিটিভ হলে ব্লাড কাজ করে না। এজন্য বিশেষ করে রক্ত লাগে, সেটিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর রেসপন্স করেনি। বাড়িতে থাকার সময়ে অবস্থা খারাপ হলেও সময় মতো আমাদের জানানো হয়নি। অনেকটা অবহেলা ছিল। খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। তাহলে হয়তো এই অবস্থা দেখতে হতো না। |